Select Page


ভারত আবারো বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি! টাকার মান পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ডলার ভ্যালুতে কমবে। ইউরোপে এলএনজি সরবরাহে রাশিয়ার সাথে চীনের কি গোপন সমঝোতা থাকতে পারে?

আগষ্ট ১৫, ২০১৯ এ একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম ভারত আর এখন পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি নেই। সমসাময়িক রুপির দর পড়ে যাওয়া এবং সামষ্টিক অর্থনীতির গতি কমে যাবার ফলে ডলার টার্ম হিসাবে ভারতের দুই ধাপ অবনতি হয়েছিল।

৫ম অবস্থান থেকে ভারত এখন ৭ম অবস্থানে নেমে গয়েছিল। ভারত যখন ৫ম বৃহৎ অর্থনীতি ছিল তখন ডলারের হিসাবে অর্থনীতির আকার ছিল ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে $২.৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্যের ছিল $২.৬৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ফ্রান্সের $২.৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

কিন্তু ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের জিডিপি $২.৮২ ট্রিলিয়ন, ফ্রান্সের $২.৭৮ ট্রিলিয়ন এবং ভারতের $২.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার হয়।

যদিও পার্থক্য ছিল খুব সামান্য এবং একজন আরেকজনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছিল কিন্তু যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পেরেছিল।

সম্প্রতি আইএমএফ এর সুত্র ধরে ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে ভারত আবার পঞ্চম বৃহত অর্থনীতির আসনে চলে এসেছে। এর জন্য যুক্তরাজ্যের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, অস্বাভাবিক মূদ্রাস্ফিতি, ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য পড়ে যাওয়া দায়ী।

কিছুদিন আগেও বলেছি বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্বের শক্তি ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক দেশ দেউলিয়া হবে, অনেল দেশ তাদের ক্ষমতার হ্রাস দেখবে।

২০২১ এর শেষ তিন মাসে যুক্তরাজ্যের থেকে এগিয়ে ছিল ভারত। চলমান অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও ভারত সেই অবস্থান ধরে রেখেছে।

সমন্বয়ের ভিত্তিতে সর্বশেষ ডলার রেট হিসাবে ক্যাশ টার্মে মার্চ প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি ছিল $৮৫৪.৭ বিলিয়ন আর যুক্তরাজ্যের ছিল $৮১৬ বিলিয়ন। ক্যাশ টার্মে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি ১% হলেও মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের পর সেটি ০.১% সংকুচিত হয়েছে। এদিকে পাউন্ডের দর পড়েছে প্রায় ৮%।
এক যুগ আগে ভারতের অবস্থান ছিল ১১ তম আর যুক্তরাজ্যের ৫ম। ২০২৭ সাল নাগাদ ভারতের অর্থনীতি ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫০০০ বিলিয়ন ছাড়াবে বলে আইএমএফ এর ফোরকাস্ট বলছে। যদিও মোদি সরকারের নির্বাচনী ঘোষনা অনুযায়ী ২০২২ এই ভারতের $৫ ট্রিলিয়ন হবার কথা ছিল। বিজেপির ডিফেন্ড করার বড় কারন হল কোভিড-১৯।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মুদ্রার দর যেভাবে পড়ছে সেই সাথে মুদ্রাস্ফীতির উচ্চহার এবছর জিডিপি কমিয়ে দিতে পারে। সুদ্রাস্ফীতি ও টাকার মান পড়ে যাওয়া সমন্বয় করলে সংকোচন হবার কথা। এদিকে আমদানির রশি টেনে ধরা, এলসি কমে যাওয়া, কনসিউমার কনসাম্পশনে ভাটা প্পড়া এর প্রতিটির প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতির ফিগারে।

সবথেকে অবাক হয়েছি চীনের সাম্প্রতিক ভূমিকায়। এলএনজির দাম আকাশছোয়া। স্পট মার্কেটে আগুন মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এলএনজি। আর এই সময়ে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করেছে চীন। বিজনেস স্টান্ডার্ড এর তথ্য অনুযায়ী চীন রাশিয়া থেকে কেনা এলএনজি দ্বিগুন এমনকি তিনগুন দামে ইউরোপের দেশগুলিতে সরবরাহ করছে। আসন্ন শীতে ঘর উষ্ণ রাখবার চিন্তা ও ঝুকি মোকাবেলায় ইউরোপের হাতে এখন উচ্চমূল্যের এলএনজি কেনা ছাড়া তেমন কোন বিকল্প নেই।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চীন ২.১৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মোট ২.৩৫ মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনেছে রাশিয়া থেকে। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে চীনে তাদের গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ৬৩.৪ শতাংশ। বিশেষ করে জুলাই মাসে চুক্তির চেয়েও প্রতিদিন বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে।

এতে লাভবান চীন ও রাশিয়া উভয়েই। নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রকাশিত তথ্যে দেখলাম, রাশিয়া আবারো ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের প্রধান লাইন মেকেনিক্যাল ত্রুটি দেখিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়া যে ইউরোপের উপর শোধ নিচ্ছে সেটা সহজেই অনুমেয়। উচ্চমূল্যের গ্যাসের যোগান দিতে ইউরোপের অর্থনীতিকে আরো বেশি ধুকতে হবে। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার গ্যাস চীন হয়ে ইউরোপ গেলে রাশিয়ার দুটি উদ্দেশ্য সফল হয়। এক, ইউরোপমে সাজা দিতে পারে। ইউরোপের অর্থনীতিকে ভোগাতে পারে। দুই, নিজেদের জ্বালানি রপ্তানি থেকে আয় ঠিক রাখতে পারবে। মাঝখানে চীনের ট্যাগে পুনরপ্তানি করে চীন বেশ ভাল অঙ্কের অর্থ আয় করবে।

ভারতের অর্থনীতি সামনের সময় বেশ ভাল সুবিধা করে নিতে পারবে। এর কারন পশ্চিমা অর্থনীতিগুলি ধুকছে। ভারত সময়ের সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করছে। তারা রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টের জ্বালানি কিনছে ফলে তাদেরকে উচ্চমূল্য পরিশোধের ঝুকিতে পড়তে হচ্ছে না।

বাংলাদেশের শিল্পে গ্যাস সরবরাহ জরুরি। গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবহার ঠিম ভাবে না করলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। আবার ইউরোপ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন উৎপাদিত পণ্য বাজার হারাবে। আমাদের ঝুকি চতুর্মূখী। এক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতা বুঝে চীনকে কাজে লাগিয়ে এলএনজির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনার দাবি রাখে। রাশিয়া ও চীন দুটি দেশের সাথেই বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল। সেক্ষেত্রে দুই দেশকে এক টেবিলে এনে যদি বাজার মূল্যের থেকে কমে এলএনজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় তবে সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।

বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসছে। চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতি এখনো জার্মানি। কিন্তু বর্তমান সঙ্কটে জার্মানির অবস্থান ও হুমকিতে। এই পরিস্থিতি চললে অচীরে জার্মানি ভারতের কাছে তাদের ৪র্থ অবস্থান হারাবে।

অর্থনৈতিক শক্তিগুলির এই পরিবর্তন বিবেচনায় আমাদের রপ্তানি বাজার চিহ্নিত করা এবং সেটা অনুযায়ী পরিকল্পনার ছক করা জরুরি। এক্ষেত্রে রাশিয়ায় আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির বড় সুযোগ আছে। ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানির বড় বাজার জার্মানি। অথচ রাশিয়ার সাথে ভাল সম্পর্ক রেখেও সেদেশে আমাদের রপ্তানির আকার তত বড় হয়নি।

২০২১ এ রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের কারেন্সি সোয়াপ ডিল নিয়ে কথা চলছিল। এক্ষেত্রে দুই দেশ কারেন্সি সোয়াপ করবে আমদানি থেকে রপ্তানি পার্থ্যক্য বা ব্যালেন্স এমাউন্ট ডলার ব্যাতিত তৃতীয় দেশের মুদ্রায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পেমেন্ট করবে। এরকম একটা ডিল নিয়ে এগোনো যেতে পারে।

বাংলাদেশ ১৭ কোটির দেশ। এত বিশাল জনসংখ্যার সুখ দু:খ বৈশ্বিক ঝুকিতে বড় রকম প্রভাবিত হবার ঝুকি কমিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করা দরকার।

এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

#wasimahin

লেখা: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২